শিরোনাম :
কাঁথা সেলাই আর টিউশনি করেই এইচএসসিতে সুমাইয়ার জিপিএ-৫ নবীনগরে তারুণ্যের উৎসবে কৃষি মন্ত্রণালয়, ভবিষ্যতের খাদ্য যোদ্ধাদের হাতে কৃষি বিজ বিতরণ নবীনগরে খালের স্রোতে ভেসে নিখোঁজ বৃদ্ধের লাশ ১৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার নবীনগরে অন্যকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ালেন এক চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমনগর মহাশ্মশান আধুনিকায়ন প্রকল্পের উদ্বোধন নবীনগরে পানিতে ডুবে ২ বোনের মৃত্যু আলমনগর মাঈনুউদ্দীন আহমেদ পৌর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভোট কেন্দ্র স্থানান্তরের দাবীতে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত নবীনগরে ভোট কেন্দ্র স্থানান্তরের চক্রান্তে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন নবীনগর নবীনগরে আওয়ামীলীগের ব্যানার টানিয়ে সরকারি খাল দখল করে দোকন ঘর নির্মাণ
শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন

কাঁথা সেলাই আর টিউশনি করেই এইচএসসিতে সুমাইয়ার জিপিএ-৫

প্রতিনিধির নাম / ১১ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

নবীনগর নিউজ ডেস্ক: যখন এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, পাসের হার কম হওয়ায় জিপিএ-৫ যখন অনেক শিক্ষার্থীর কাছে স্বপ্নেই রয়ে গেছে, ঠিক তখনই সব প্রতিকূলতাকে বৃদ্ধা-আঙুল দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সুহাতা গ্রামের দিনমজুর মো. জীবন মিয়ার বড় মেয়ে সুমাইয়া।

এসএসসির ধারাবাহিকতায় এবার এইচএসসিতেও নবীনগর মহিলা কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে তিনি অর্জন করেছেন গৌরবময় জিপিএ-৫।

অত্যন্ত অসচ্ছল পরিবারে বেড়ে ওঠা সুমাইয়ার এই অর্জন যেন অন্ধকারের বুকে এক চিলতে আলো। তার বাবা জীবন মিয়া ইজিবাইক চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালান। কিন্তু তাতেও ঋণের কিস্তি শোধ হয় না। সংসারের এই টানাপোড়েনে হাল ধরতে মা পারভীন আক্তার বাধ্য হয়ে বাড়িতে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। আর এই সংগ্রামেই ছোটবেলা থেকে মায়ের প্রধান সহযোগী হয়ে ওঠেন সুমাইয়া।

দিনের এক ভাগে বই-খাতা আর অন্য ভাগে সুঁই-সুতো—এভাবেই কাটে সুমাইয়ার প্রাত্যহিক জীবন। তিনি জানান, সংসারের খরচ মেটাতে মায়ের সঙ্গে কাঁথা ও নকশিকাঁথা সেলাই করেন। গ্রামের মানুষের দেওয়া পুরোনো শাড়ি সেলাই করে প্রতি কাঁথায় ২০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং নকশিকাঁথা থেকে ১,০০০ থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন হয়।

সংগ্রাম এখানেই শেষ নয়। নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার অদম্য ইচ্ছায় তিনি গ্রামের প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া কয়েকজন ছেলেমেয়েকে টিউশনিও করান। কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায় আর ইচ্ছাশক্তির জোরেই সুমাইয়া ছিনিয়ে এনেছেন জিপিএ-৫ এর মতো সাফল্য।

এই কঠিন সংগ্রামে সুমাইয়া একা ছিলেন না। তিনি পাশে পেয়েছেন তার চাচা, কলেজ শিক্ষক ও ‘বই মজুর’ হিসেবে পরিচিত স্বপন মিয়াকে। তিনি সুমাইয়াকে কেবল অনুপ্রেরণাই জোগাননি, নিজের প্রতিষ্ঠিত  ‘গুঞ্জন পাঠাগারে’ নিয়মিত বিনামূল্যে বই পড়ার সুযোগও করে দিয়েছেন। এ ছাড়া চাচার পরিচিত শিক্ষকদের কাছে ‘বিনা মূল্যে’ পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছেন এই মেধাবী ছাত্রী।

কৃতজ্ঞ সুমাইয়া তার সংগ্রামের কথা জানিয়ে বলেন, “আমার বাবা অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অটোরিকশা চালিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন না। তাই আগামী দিনের পড়াশোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। তবে আমি পড়াশোনা চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে আরও পরিশ্রম করব, তবুও পড়াশোনা আমি ছাড়বো না।” আমার এখন স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইনি বিভাগে পড়ালেখা করার।
ভবিষ্যতে আমি যেন আমার এলাকার জন্য ভালো কিছু করতে পারি।

সুমাইয়ার চাচা স্বপন মিয়া বলেন, “সে অসম্ভব মেধাবী ছাত্রী। দর্জি কাজ, কাঁথা সেলাই ও টিউশনি করে লেখাপড়া চালিয়ে এস.এস.সি এবং এবার এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক শাখা থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এতকিছুর পরও তার এই সাফল্যে আমরা গর্বিত।”

তবে এই সাফল্যের উল্লাসের মাঝেই লুকিয়ে আছে উচ্চশিক্ষার গভীর অনিশ্চয়তা। স্বপন মিয়া সমাজের বিত্তবান ও দয়াশীল মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, সুমাইয়ার উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পূরণের জন্য আর্থিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। যেন এই অসম্ভব মেধাবী মেয়েটি ভালো মানুষ হয়ে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে।

Facebook Comments Box


এ জাতীয় আরো সংবাদ
error: Content is protected !!
error: Content is protected !!